রাহাতুল ইসলাম আবীর ।
আমাদের দেশ থেকে অনেকদূরে চীন নামে একটি দেশ রয়েছে । আমাদের দেশে নানা প্রজাতির পশুপাখি রয়েছে ,তেমনি সেই দেশেও আছে নানা ধরণের নানা প্রজাতির পশুপাখি। শীতপ্রধান প্রায় সকল দেশে যখন তুষারপাত হয় , তখন চীনেও তুষারপাত হয় । ফলে সে সময়ে এ দেশগুলোর অধিকাংশ দেশের পাখি চলে আসে আমাদের সবুজ শ্যামল অপরুপ এই দেশে । পাখিরা আমাদের দেশে আসে । কারণ তারা আমাদেরকে এবং আমাদের এই নদীমাতৃক দেশটিকে খুব ভালোবাসে । আমরাও তাদেরকে ভালোবাসি । কিন্তু আমাদের দেশের গুটিকতক মানুষ এই পাখিগুলোকে সহ্যই করতে পারে না । সরকারের শত নিষেধ অমান্য করে এই খারাপ লোকেরা নির্দয়ভাবে পাখিগুলোকে বন্দুকের শিকারে পরিণত করে । অসাধু শিকারীর গুলিতে আহত এমনই এক ছোট্ট পাখির জীবনকথা আজ আমি তোমাদেরকে শুনাব , যা সে তার উদ্ধারকারী বন্ধু রাহফাতকে বলেছে । এসো বন্ধুরা আমরা তাদের দুঃখ একটু হলেও অনুভব করি ।
পাখিটি বলতে শুরু করেছে ঠিক এভাবেই - বাংলাদেশ থেকে ঠিক উত্তরে চীন দেশের ডুংহয়াং শহরের এক বনে জম্মগ্রহন করেছিলাম আমি । মা-বাবার কনিষ্ঠ সন্তান ছিলাম বিধায় খুব আদরে আহ্লাদেই বেড়ে উঠতে লাগলাম । যখন একটু বড় হলাম তখন ভাইবোনদের সাথে বনে বনে গাছের ডালে ঘুরে বেড়াতাম । সন্ধায় যখন নীড়ে ফিরতাম , তখন মা পাশে বসিয়ে খাওয়াতেন এবং গল্প শোনাতেন । মায়ের গল্পগুলো মাঝে তোমাদের দেশের গল্পগুলো আমার বেশি ভালো লাগতো । মা বলতেন , জানুয়ারী মাসে অর্থাৎ তোমাদের দেশের পোষ মাসেই নাকি ভাইয়া আর আপুদের সাথে ঘুরতে এখানে আসবো । আমি বললাম , মা তুমি যাবে না আমাদের সাথে ? মা বললেন , বাছা আমি তো বহুবার গিয়েছি । তাই আমি এবার আর যাবো না । তোমরাই ঘুরে আসবে । আর এসে আমাকে সফরের গল্প শোনাবে । তাহলে তো আমারও যাওয়া হয়ে যাবে । তাই না সোনামণি ? আমি বললাম , হুম ।
আমি মাকে জিজ্ঞাসা করলাম , মা , ওখানকার পাখি ভাইয়েরা কেমন ? মা বললেন , সেখানে কিছু খারাপ মানুষ আছে ,যারা নতুন পাখি দেখলে মেরে ফেলে । এ কথা শুনে আমার বুক ধুকধুক করে উঠলো । কিছু আর বললাম না । মা শোনাতে লাগলেন , তোমাদের দেশের কাহিনী । ধীরে ধীরে সফরের সময় ঘনিয়ে এলো । মা বাবার মন একটু খারাপ । খারাপ হওয়াই স্বাভাবিক । প্রিয় ছেলেকে এতটা দিন দিখতে পাবে না , কষ্ট তো লাগবেই । যাত্রার আগেই মা আমাকে খাইয়ে দিলেন । চুমু এঁকে দিলেন আর বলে দিলেন, সর্বদা যেন ভাইদের সাথে থাকি , শিকারীর সামনে যেন ভুলেও না যাই । তো আমরা যাত্রা শুরু করলাম ডুনহুয়াং শহরের
চির আপন ও পরিচিত সে বন থেকে । যেহেতু আমি সবচেয়ে ছোট ছিলাম , তাই বড় ভাইয়া সহচারীদের
বললেন, তোমরা একটু ধীরগতিতে সামনে অগ্রসর হবে । কারণ , এখানে আমাদের আদরের ছোট্টমণিও
আছে । আমরা উড়তে শুরু করলাম এবং এক পর্যায়ে “কিমো”তে পৌছে গেলাম । এরপর ”টুমার” তারপর
“জিগাজ” এভাবেই আমরা চীন পাড়ি দিয়ে চলে এলাম নেপালের ’কাঠমুন্ডু’তে তারপর সেখান থেকে
কোনাকুনিভাবে ভারতের ”লক্ষ্ণৌ”গিয়ে থামলাম এবং সেখানে একদিন অবস্থান করলাম । একদিন
ভারতে থাকার ফলে সেখানকার কিছু পাখির সাথে বেশ ভাব হলো আমাদের , তারাও আমাদের সাথে
ঘুরবে বলে ঠিক করলো । পরদিন আমরা সকলে একসাথে বাংলাদেশে প্রবেশ করলাম ।
এদেশের প্রতিটি জিনিষ আমাকে মুগ্ধ করেছে । যদিও এ দেশ
আমার দেশের ন্যায় অতবড় নয় , তবুও আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি , বন্ধু , তোমার দেশ সত্যিই
খুব সুন্দর । যেমন সুন্দর তার নদী-নালা , খাল-বিল , তৃপ্তিকর তার আলো-বাতাস , নয়নজুড়ানো
বনের সারি সারি তরুবিথী ,তেমন সুন্দর তার বুকে বসবাসকারী মানুষ এবং আরো সুন্দর তাদের
মন । দীর্ঘ দুটি মাস সফরের পর যখন বাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম , ঠিক তখন ঘনিয়ে
এলো আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময় । এক হিংস্র শিকারীর বন্দুকের নিশানা হতে হলো আমাকে
। শত চেষ্টা করেও আমাকে উদ্ধার করতে পারলো না আমার সঙ্গীরা , চিরদিনের জন্য হারালাম
মমতাময়ী মাকে ,স্নেহশীল বাবাকে আর হারালাম প্রিয় ভাই-বোন ও সাথীদেরকে । গাছ থেকে কাঠখন্ডের
ন্যায় এক ঘরের উপর পড়ে গেলাম । ডুকরে ডুকরে কাদঁতে লাগলাম স্বজন হারানোর বেদনায় । ভেবেছিলাম
এখন বুঝি চলে যাবো পরপারে । কিন্তু শিকারী আমাকে খুঁজে পেল না ,ব্যর্থ হয়েছে ভেবে চলে
গেল । আর এরপরেই আমাকে তুমি কুড়িয়ে পেলে । হয়তো আর বেশিক্ষণ বেঁচে থাকতে পারবো না ।
আমার একটি চিঠি তোমার কাছে দিয়ে যাচ্ছি । আগামী বছরের
অথিতি পাখিদের দিয়ে বলো , যেন তারা আমার মায়ের কাছে চিঠিটি পৌঁছে দেয় । ভালো থেকো
বন্ধু!! এই বলে পাখিটি চিরদিনের মত বিদায় নিলো । ছোট্ট রাহফাত পাখিটিকে একটি গাছের
নিচে কবর দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বাড়ি ফিরলো । সাথে করে নিয়ে এলো একটি প্রশ্ন । বারবার
সে প্রশ্ন তাকে আঘাত করতে লাগলো - কেন অথিতি পাখিদের ভালোবাসতে পারার শক্তি নেই কিছু
মানুষের ? কেন তারা তাদেরকে কষ্ট দিয়ে মেরেই ফেলে ?
ওয়েবসাইটে আপলোড , আব্দুর রহমান আল হাসান
পাওয়ার ডোনেট , www.abdurrahmanalhasan.com
0 মন্তব্যসমূহ