মাহমূদুল হাসান ।
মা , একটি মধুর শব্দ । যতই উচ্চারণ করি এই শব্দ থেকে
মধু ঝরে ।থেকে থেকে ইচ্ছে হয়, আবার উচ্চারণ করি । আমার তো মনে হয় , এই শব্দের মধুরতা
কখনো শেষ হবে না । যত ডাকতে থাকবো ততই বাড়তে থাকবে । মা! আমার মা ! আমার মমতাময়ী মা
!
আমি মাসিক বিরতিতে বা অন্য বিরতিতে যখন বাসায় যাই বাড়ির
সদর দরজায় দেখতে পাই মাকে । দাঁড়িয়ে আছেন আমার অপেক্ষায় । কখন তার বুকের ধন সোনার
মানিক ঘরে ফিরবে । মাদরাসা থেকে রওয়ানা হয়ে বাড়ি পৌঁছতে সন্ধা হয়ে যায় । কিন্তু সন্ধা
নামলে কী হবে ? মাগরিবের নামাজ পড়ে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে থাকেন আমার অপেক্ষায় । বাড়ি থেকে
বড় রাস্তা মোটামুটি দেখা যায় । যখন তিনি আমাকে রাস্তায় গাড়ি থেকে নামতে দেখেন তখন চলে
আসেন সদর দরজার আড়ালে । কলিংবেলে হাত রাখার আগেই দরজা খুলে যায় । অভ্যর্থনা জানায় একখানা
হাসোজ্জ্যল মুখ । সালাম দিয়ে ঘরে প্রবেশ করি । তখন তিনি আমাকে চেনে নেন তার বুকে ,
মাথার উপর টেনে দেন মমতার দীর্ঘ আঁচল । যদিও এখন আমি বড় , কিন্তু বাবা-মায়ের কাছে তাদের
সন্তান বুড়ো হয়ে গেলেও যেন সেদিনের ভূমিষ্ট হওয়া নবজাত শিশু ।
ভিতবে প্রবেশ করে সাক্ষাৎ করি বাবা, ভাই-বোনদের সাথে
। যে কয়দিন বাড়িতে থাকি সর্বদা চেষ্টা করি
তাদের খেদমত করার এবং সময় দেওয়ার । যখন বিরতি শেষ হতে থাকে এবং মাদরাসায় যাওয়ার সময়
হয়ে যায় , তখন মায়ের চেহারায় এক অশান্তির ছাপ ফুটে উঠে , তবে উনি তা বুঝতে দেন
না আমাকে । কিন্তু আমি এই দৃশ্য ঠিকই দেখতে পাই এবং আমার বুকটা হু হু করে উঠে । বিরতি
শেষে যখন মাদরাসায় আসার জন্য বাড়ির সদর দরজায় পৌঁছই তখন কেবল দুজন আসেন আমাকে বিদায় জাননোর জন্য
। একজন হলেন আমার মমতাময়ী মা ,দ্বিতীয়জন হলেন আমার শ্রদ্ধেয় বাবা । তখন দেখতে হয় আমাকে
এক আশ্চর্যের দৃশ্য । বিদায় দেওয়ার সময় বাবার মুখ দেখে ঠিক বুঝে উঠতে পারি না , তিনি
কি দুঃখিত ? হয়তো তার আড়াল করে রাখার শক্তি অনেক বেশি । কিন্তু মায়ের চোখের কোণায় জমে
থাকা বেদনার অশ্রু আমার দৃষ্টির আড়াল হয় না । কোনোভাবে কয়েকটি কথা বলেন ভাঙ্গা ভাঙ্গা
গলায় । অনেক সময় তিনি নিজেকে যদি ধরে রাখতে পারবেন না মনে করেন তাহলে আমার সামনেও আসেন
না । তখন বুকভরা ব্যথা নিয়েই আমাকে রওয়ানা
হতে হয় মাদরাসায় ।
আদীব হুজুর প্রায় সময় আমাদের বলতেন , তুমি মাকে খুশি রাখো , দুনিয়া আখেরাতে কোথাও তুমি আটকাবে না । মাকে কীভাবে খুশি রাখবে ? শুধু জাওয়াল করে বলবে , ”মা তোমার লাইগ্যা মনডা কান্দে”ব্যস আর কিছু নয় । দেখবে তোমার মা দু হাত তুলে শুধু এতটুকুই বলবেন ,আল্লাহ আামার পোলাডার মন বালা কইরা দ্যাও । হে আল্লাহ , তুমি আমাদের উপর মায়ের নিরাপদ আঁচলকে আরো দীর্ঘ করে দাও , আমীন ।
ওয়েবসাইট আপলোড , আব্দুর রহমান আল হাসান
পাওয়ার ডোনেট , www.abdurrahmanalhasan.xyz
1 মন্তব্যসমূহ
Awesome 👍
উত্তরমুছুন