মোফাজ্জল হোসাইন সায়েম ।
আমাদের প্রত্যেকের মা-বাবা রয়েছেন । হয়তো জীবিত বা মৃত । হয়তো এখনো সন্তানের মাথার উপর মায়ার ও স্নেহের ছায়ায় পাখা মেলে রেখেছেন কিংবা পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন । এক আল্লাহর নিকট প্রত্যাবর্তন করেছেন । এখানে আমি সকলের উদ্দেশ্যে একটি প্রশ্ন ছুঁড়ে দিতে চাই । আশা করবো , সকলে মনে ও হৃদয়ে গভীরভাবে এ প্রশ্ন নিয়ে চিন্তা করবেন । খুঁজে দেখবেন , এই প্রশ্নের উত্তর কী ?
প্রশ্নটি হলো , মা-বাবার প্রতি কেমন আচরণ আমাদের জীবনে সফলতা বয়ে আনবে ? এই প্রশ্নের জওয়াবের পূ্র্বে আপনাদের সমীপে বাস্তব একটি ঘটনা পেশ করছি , যেন এই ঘটনার মাঝেই আমরা কাঙ্ক্ষিত জবাব খুঁজে পেয়ে যাই । এক বাস্তব ঘটনা । ঘটনাটি একটি সুন্দর ছেলের , পিতার মৃত্যুর পর যে ছিল তার মায়ের অনুগত । তাদের সে দিনগুলো কাঁটছিলো অত্যন্ত মধুর । ছিল সুখ শান্তি উৎফুল্লতার ছোঁয়া । প্রকৃতিও যেন তাদের সঙ্গে আনন্দ - বেদনা , সুখে-দুঃখে ব্যাথিত হতো । প্রতিটি সৃষ্টির মাঝে যেন তাদের সে সুখের আভা বিরাজ করতো । পাখপাখালির কণ্ঠে যেন বেজে উঠেছিল তাদের জীবনের স্নিগ্ধ সুখ-শান্তি ।
কিন্তু এই সুখ বেশিদিন টিকলো না । তাদের চাঁদের মতো সোনার হাসিটুকু হারিয়ে গেলো । পিতৃহারা তাদের সে পরিবারটি ছিল একটি সোনার সংসার , যেখানে তার মা ও বোন ছিলো পর্দানশীন। কিন্তু ছেলেটি একটি ভুল করে বসলো , যা তার জীবনকে নিঃশেষ করে দিয়েছিল । সে এক বেপর্দা মেয়েকে বিবাহ করলো । শুরু হলো তাদের জীবনে অন্ধকারের কালো থাবা । যেহেতু মেয়েটি বেপর্দায় চলাফেরা করতো , ফলে সে টিভি-সিনেমার প্রতি আকর্ষণ থাকা কোনো আশ্চর্যের বিষয় নয় । মেয়েটি সংসার শুরু করলো । কিন্তু সে এখানে শান্তি পাচ্ছিলো না । কারণ , ঘরে টিভি নেই । মেয়েটি বাইরের আবহাওয়ায় বেড়ে উঠেছে । সে বললো , যদি তুমি আমাকে সপ্তাহে একবার সিনেমা দেখতে না নিয়ে যাও , তাহলে আমি তোমাকে ছেড়ে চলে যাবো । এই বলে বেপর্দা অবস্থায় সিনেমা দেখার উদ্দেশ্যে বের হয়ে যাচ্ছিলো । তখন ছেলের মা তাকে যেতে বাধা দিচ্ছিলেন এই বলে , তুমি যদি যেতে চাও তাহলে পর্দা করে যাও । কিন্তু মেয়েটি কথা মানছিলো না , আর ছেলেটি পাশেই ছিলো । হঠাৎ কি এক দুর্ভোগ সে ডেকে আনলো । একপর্যায়ে বিরক্ত হয়ে ছেলেটি তার মাকে সজোরে ধাক্কা দিলো । মা পড়ে গিয়ে মাথা ফেঁটে গেল । সেখান থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিলো । ইতিমধ্যে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন । সে মাকে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে গেল । কিন্তু মায়ের জ্ঞান ফিরছিল না ।
হঠাৎ মায়ের জ্ঞান ফেরে । তখন মা তার মাথা উঠাতে পারছিলেন না । তারপরও চেষ্টা করে এদিক-ওদিক তাকাচ্ছিলেন । যখন তার ঐ অপরাধী ছেলের দিকে দৃষ্টি পড়লো তখন তিনি ঠোঁট নাড়িয়ে কি যেন বলতে বলতে দুনিয়া থেকে বিদায় নিলেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজীউন।
মনে হলো , মায়ের সাথে এরুপ আচরণটি আল্লাহর ক্রোধকে বাড়িয়ে দিলো । যখন ছেলেটি বাড়ি ফিরছিলো পথিমধ্যে রাস্তায় পড়ে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে গেলো । কিছুক্ষণ পর তার হুঁশ ফিরে এলে সে অনুভব করলো , কে যেন তার শরীরে রগ টেনে ছিঁড়ে ফেলছে। এদিকে পারিবারিক কবরস্থানে মাকে দাফন করা হলো । ছেলেটিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলো । কয়েকদিন চিকিৎসা করার পরও ডাক্তার রোগ নির্ণয় করতে পারলেন না । ডাক্তার তাকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিলেন । সেখানেও চারদিন চিকিৎসার পর ডাক্তার অপারগতা প্রকাশ করলেন ,কোনো রোগ তারা খুঁজে পেলেন না । তারা পরামর্শ দিলেন , বিদেশে নিয়ে যাওয়ার জন্য । সে জ্বালা-যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে ছটফট করতে থাকে । বিদেশে চার মাস চিকিৎসার পরও কোনো উন্নতি হলো না । তারপর আবার নিজের শহরে তাকে নিয়ে আসা হলো । স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে গেলো । সে চিন্তা করে ঠিক করলো , আজ রাতে সে মায়ের কবরের পাশে গিয়ে চিৎকার করে কাঁদবে । সে হাঁটতে পারছিলো না । তবুও বুকের উপর ভর দিয়ে হেছড়ে হেচড়ে কবরের কাছে গেলো । সে চিৎকার করে কেঁদে কেঁদে বললো , মা ! আজ সেই স্ত্রী আমাকে ছেড়ে চলে গেলো । এখন আমার বুঝে এসেছে । কিন্তু তুমি আর নেই । তুমিই তো ছিলে পৃথিবীতে আমার একমাত্র আপন । এই বলে সে কাঁদতে কাঁদতে বেহুশ হয়ে কবরের উপর পড়ে গেলো । এভাবে ভোর হয়ে গেলো । রাতের আধাঁর কেটে গেলো । সে খেয়াল করলো , যে জ্বালা-যন্ত্রণার কারণে মাসের পর মাস কাতরাচ্ছিলো , সে সমস্ত ব্যাথা দূর হয়ে গিয়েছে ।
এই ঘটনা থেকে শেখার ও বুঝার বিষয় এই যে , মা-বাবাই হলেন পৃথিবীতে একমাত্র আপন ব্যাক্তি । কিন্তু কখনো কখনো এটা আমাদের বুঝে আসে , যখন এই মহান নেয়ামত আমাদের হাতছাড়া হয়ে যায় । তাই আসুন আমরা সতর্ক হই । মহান আল্লাহর দান করা শ্রেষ্ঠ নিয়ামতের প্রতি শ্রদ্ধা ও আন্তরিকতা , সদাচার ও হৃদ্যতার প্রচেষ্টায় নিয়োজিত হই । আল্লাহ তা’আলা আমদের সবাইকে তাওফিক দান করুন , আমীন ।
ওয়েবসাইটে আপলোড, আব্দুর রহমান আল হাসান
পাওয়ার ডোনেট , www.abdurrahmanalhasan.xyz
0 মন্তব্যসমূহ