রুহুল আমীন ।
আমি শৈশব থেকেই মিশুক , কারো সাথে মিশে কথা বলতে বা খেলা করতে আমার বরাবরই ভালো
লাগে । কিন্তু আমার বন্ধু খুবই কম , নেই বললেই চলে । কেননা শৈশব থেকেই আমার পরিবার
এই বিষয়ে যত্নবান ছিল যে আমি কাদের সাথে উঠাবসা করি , চলাফেরা করি । শৈশবকালে শুধু নিকটাত্মীয়দের সাথে চলাফেরা আমার
উঠাবসা , চলাফেরা ছিল । তাদের বাহিরে আর কারো সাথে আমার কোনো সম্পর্ক ছিল না । তখন
বুঝতাম না , কেন আমাকে বাহিরের ছেলেদের সাথে মিশতে দেয়া হচ্ছে না । কিন্তু এখন সহজেই
তা বুঝতে পারি ।
যাদের সাথে আমার উঠাবসা চলাফেরা ছিল সে ছিল তাদেরই একজন
। তবে সে আত্মীয় ছিল না । সে আমাদের বাসায় ভাড়া থাকতো । বয়সে আমার থেকে এক বা দুই বছরের
বড় হবে । তার নাম ছিল বিপ্লব ।ছেলেটি দুষ্ট ছিল বটে , শৈশবের কত স্মৃতি যে তার সাথে
জড়িয়ে আছে ! আমাদের বাড়ির উঠানে একটি বিশাল বড় পেয়ারাগাছ ছিল । একদিন বিকেলে দেখলাম
, সে গাছে উঠে দোল খাচ্ছে । দেখামাত্র আমারও ইচ্ছা হলো দোল খাওয়ার । আমি তাকে বললাম
।সে আমার দিকে না তাকিয়ে দোল খেয়েই যাচ্ছিলো । আমি আবার বলার পর সে রেগে গিয়ে বললো
,” তুমি তো ছোট , পারবে না । ” তখন আমার আর সইলো না । একটু জোর আওয়াজে বলে ফেললাম,
এই! নামো বলছি , নামো । সে গাল ফুলিয়ে নেমে গেল আর আমি গাছে উঠে পড়লাম । যখন আমি দোল
দিতে যাবো, সে আমার পা ধরে দিলো এক টান । ব্যস , যা হবার তাই হয়ে গেল । পড়ামাত্র মাথা
ফেঁটে জামা রক্তে ভরে গেল । আহ কি যে ব্যাথা পেয়েছিলাম তখন । তৎক্ষণাত আমাকে ডাক্তারের
কাছে নিয়ে যাওয়া হলো । তিনিও কিছুক্ষণ সুঁই-সুতা দিয়ে উত্তম-মাধ্যম দিলেন আমাকে । তার
সাথে মিশে আছে আমার শৈশবের আরো কত গল্প ।
সেদিনের সেই ছেলেটি আজ আর এই অপসৃয়মান দুনিয়াতে নেই
, আছে শুধু তার স্মৃতি । আসলে সঠিক নির্দেশনা না পাওয়ায় সে তার জীবনের মূল্য বুঝতে
পারে নি । তার ধারণাও ছিল না , তার জীবনটি কত সুন্দর হতে পারতো । এ কারণে সে তার জীবনকে
হারিয়ে ফেলতে বিন্দুমাত্র চিন্তা করে নি । যদি সে একটু ভাবতো , আমি কি করেছি , কার
জন্য আমার জীবন বিলিয়ে দিচ্ছি ? তাহলে হয়তো জীবনের গুরুত্ব এবং মর্ম তাকে হারিয়ে যেতে বাধা দিতো । হয়তো সে হারাতো না
, যদি সে কোনো ভালো পরিবেশ পেতো , যেখানে প্রতিক্ষণ কেউ তার দেখাশোনা করছে । তাহলে
সে প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যেতো । আমার মনে হয় তার আত্মহত্যার তার একার নয় বরং
তার পরিবারের । কেননা তারা তাকে শৈশব থেকে যথাযথ নির্দেশনা দেন নি । বরং তাকে নিজের
ইচ্ছেমত চলতে দিয়েছে । যখন যা চেয়েছে তাই পেয়েছে ,কখনো দুঃখ অনুভব করে নি । কারো শাসন
পায় নি । এভাবে যখন সে বড় হতে লাগলো , তখন তার এই অবস্থা দাঁড়ালো - তার কাছে কোনো
দোষ , দোষ বলে মনে হতো না । যেহেতু ইতিপূর্বে তাকে কেউ ভালো-খারাপ , দোষ-গুণ বুঝিয়ে
দেয় নি । এভাবেই সে একদিন আত্মহত্যা করে চলে গেলো এই পৃথিবী ছেড়ে ।
আমি প্রথমে আল্লাহর প্রতি এবং আমার পরিবারের প্রতি অনেক কৃতজ্ঞ । কেননা তারা শৈশব থৈকেই আমাকে নির্দেশনা দিয়ে দিয়ে এ পর্যন্ত এনেছেন । আসলে আল্লাহ যাকে পথ দেখান তার কোনো পথভ্রষ্টকারী নেই । আল্লাহ প্রতিটি মুহুর্ত আমাদেরকে দয়া করেই যাচ্ছেন । আল্লাহ অতি দয়ালু , অতি দয়াময় , অতি মেহেরবান ।
ওয়েবসাইট আপলোড , আব্দুর রহমান আল হাসান
পাওয়ার ডোনেট , www.abdurrahmanalhasan.xyz
0 মন্তব্যসমূহ