আমাদের অবস্থার উত্তরণ অনিবার্য

 


ইয়াসিন নিজামী ইয়ামিন ।

আরবীতে একটা কথা রয়েছে , নাহনু উম্মাতুল কিরাআহ - আমরা পড়ার জাতি । আমরা পাঠনিমগ্ন উম্মত । আমাদের জন্য আল্লাহর প্রথম প্রত্যাদেশ ‘পড়ো ‘ । দীর্ঘ তেইশ বছরে নাজিল সম্পূন্ন হয় সর্বশেষ আসমানী গ্রন্থ । মানবতার মুক্তির সনদ মহাগ্রন্থ আল কোরআন । এই পবিত্র কিতাবের প্রতিটি লাইনের প্রতিটি হরফে গাঁথা আছে মানুষের ইহ ও পরকালীন কল্যানের বিচিত্র উপাদান । সেই গ্রন্থে সর্বপ্রথম যে আদেশটি করা হয়েছিল সাত আসমানের উপর থেকে ,সেটি ছিলো পড়া সংক্রান্ত নির্দেশনা । (হে নবী) পড়ুন আপনার প্রভুর নামে , যিনি আপনাকে সৃষ্টি করেছেন । ( সূরা আলাক্ব ,আয়াত ১ )


এই একটি বাক্য ছিল প্রথম নির্দেশনা । এটি যথেষ্ট ছিল মুসলিম উম্মাহকে পাঠমুখী করতে। অথচ আল্লাহ তার কিতাবে এতুটুকু বলে সীমাবদ্ধ থাকেন নি , বরং বিভিন্ন স্থানে তিনি পড়তে লিখতে ও জ্ঞান অর্জনে উদ্বুদ্ধ করেছেন । নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও জ্ঞানের আলোয় উদ্ভাসিত হতে উৎসাহিত করেছেন । নবী সা. যে সময় ও সমাজের মাঝে প্রেরিত হন ,তাকে বলা হয় আইয়ামে জাহিলিয়্যাত অর্থ্যাৎ অজ্ঞতা ও মুর্খতার যুগ । এ সমাজের জন্য আল্লাহর প্রথম আদেশ নামাজ বা রোজা নয় , প্রথম আদেশ ছিল পড়ার । জ্ঞানের আলোয় নিজের ক্ষুদ্রতা আর স্রষ্টার বিশালতার পরিচয় লাভ করার । যখন মুসলিম ও মুশরিকদের প্রথম যুদ্ধ বদর যুদ্ধে মুসলিম বাহিনী জয়ী হয় , তখন মুসলমানদের হাতে ধরা পড়ে কিছু মুসলিম সেনা । এদের কাছ থেকে মুক্তিপণ নিয়ে তাদেরকে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় । কিন্তু যেসব বন্দীদের মুক্তিপণ দেওয়ার , তাদের সম্পর্কে রাসূল সা. এর ফায়সালা ছিল , যারা লেখাপড়া জানে তারা আমাদের দশজনকে লেখাপড়া শেখাবে । এটাই তাদের মুক্তিপণ । এই ফায়সালা আমাদের কি বার্তা দেয় ? এটাও আমাদের সামনে পড়া ও স্বাক্ষরতার গুরুত্ব তুলে ধরে ।


কিন্তু পরিতাপের বিষয় , পড়ার জাতি আজ পড়তে ভুলে গেছে । বিভিন্ন জরিপে দেখা যায় , কোনো মুসলিম দেশেই শিক্ষার হার শতভাগ নয় । বিশ্ব আজ অধ্যয়ন ও গবেষণায় যে আকাশছোঁয়া উচ্চতায় উপনীত , আমাদের অবস্থান তার থেকে অনেক নিচে । সাধারণ পড়া আর জ্ঞানার্জনের কথা বাদ-ই দিলাম , ধর্মীয় যে জ্ঞানটুকু মুসলিম হিসেবে আহরণ করি , তাতেও অবস্থা সন্তোষজনক নয় । তথ্য প্রযুক্তির উৎকর্ষের এই যুগে মানুষের বিনোদন তথা দেহের খোরাকের সঙ্গে মনের খোরাক বেড়েছে বিকল্প ধারায় । কিন্তু আদি ও আসল ধারায় পাঠ ও অধ্যয়নের উপায়ে বিনোদনসন্ধানীর সংখ্যা কেবল কমেই চলেছে । ভাবতে কষ্ট হয় , যাদের আবিস্কৃত আধুনিক উপকরণ আমাদের বই থেকে দূরে নিয়ে যাচ্ছে , তারা ঠিক-ই পড়ছে । জ্ঞানরাজ্যে অবগাহন করছে ।


প্রশ্ন থেকে যায় , তাহলে আমাদের মধ্যে যারা শিক্ষিত বলে পরিচিত তারা কিভাবে শিক্ষিত হচ্ছে ? বলবো , হ্যাঁ , আমরা পড়ি । চাকুরির জন্য পড়ি পেশাগত বই । ডাক্তার পড়ে ডাক্তারী বই , উকিল পড়ে ওকালতির বই , রাজনীতিবিদ পড়ে রাজনীতির বই । কিন্তু নিজেকে অবিরত ভাঙ্গাগড়া , আলোকিত ও দীপান্বিত করার ঋদ্ধ ও সম্পূন্ন মানুষ হিসেবে গড়ার সেই ব্যাপক পাঠ কই ? মনুষ্যত্ব অর্জন ও মানবিকতা বিকাশের সেই আলোর অনুসন্ধান কই ?

পৃথিবীতে মুসলমানদের সংখ্যা কম নয় । দুই শত কোটি মুসলমানের বসবাস বর্তমানে । পঞ্চাশটির উপর মুসলিম দেশ রয়েছে । কিন্তু কোনো জাতি কি আছে এতো নিঃস্ব বা অধিকারহারা । পৃথিবীতে সবচেয়ে নির্যাতিত অঞ্চলগুলোর তালিকায় রয়েছে মুসলিম জনপদ । তাই নিজেদের গড়া ও অধিকার বুঝে পাবার জন্য জ্ঞানের শক্তিতে সমৃদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই । এছাড়া আমাদের ভাগ্যবদল সুদূর পরাহত । তাই আমাদের পড়তে হবে সব সময় , সব বয়সে .................


ওয়েবসাইটে আপলোড , আব্দুর রহমান আল হাসান

পাওয়ার ডোনেট , www.abdurrahmanalhasan.xyz

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Close Menu